প্রথমবার বিবিসির মতো কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকের সামনে মিয়ানমারের সাবেক সেনারা নিজ দেশের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
সম্প্রতি বিবিসির কাছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এঁদের মধ্যে একজন মাউঙ ও। চলতি বছরে মিয়ানমারের একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক লোকদের হত্যার সঙ্গে যে ব্যাটালিয়নটি যুক্ত ছিল, সেই দলের সদস্য ছিলেন মাউঙ।
মাউঙ ও বলেন, ‘তাঁরা (সেনা কর্মকর্তারা) আমাকে নির্যাতন, লুটপাট ও নিরীহ মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।একত্রে সবাইকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয় আমাদের। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, আমাদেরকে বয়স্ক নারী-পুরুষকেও হত্যা করতে হয়েছে।’
বিবিসির কাছে মিয়ানমারের যে ছয় সেনা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাঁরা সবাই এখন পলাতক। নিজের কৃতকর্মের ভার সইতে না পেরে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে স্থানীয় মিলিশিয়াদের নিয়ে গঠিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সে (পিডিএফ) যোগ দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে একজন করপোরাল রয়েছেন। ওই সৈনিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিবিসি তাঁদের সঠিক নাম প্রকাশ না করে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছে।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মধ্য মিয়ানমারের ইয়ায়ে মায়েত গ্রামে তিনটি হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই অভিযান প্রসঙ্গে করপোরাল অং বলেন, ‘আমাদের ওপর নির্দেশ ছিল-যাকে দেখতে পাওয়া যাবে তাকেই গুলি করার। এ ছাড়া গ্রামের বড় ঘরগুলোকে জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশও ছিল।’
অংয়ের ইউনিটের সদস্যরা ওই গ্রামের পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার পর পুড়িয়ে দেন। অং নিজেই চারটি ঘরে আগুন দেন। আর পুরো অভিযানে প্রায় ৬০টি ঘরে আগুন লাগানো হয়।
স্বীকারোক্তি দেওয়া অপর এক সেনা সদস্য থিহা। ভাড়াটে সেনা হিসেবে মাসে ১০০ ডলার চুক্তিতে তাঁকে নিয়োগ দিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিয়োগ পাওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় একটি ইউনিটের সঙ্গে তাঁকে পাঠানো হয় বিশেষ অভিযানে।
অভিযান প্রসঙ্গে থিহা বলেন, ‘আমি একটি কিশোরী মেয়ের চিত্কার ভুলতে পারি না। আমার কানে এখনো তার চিত্কার ভেসে আসে। মেয়েটির ঘরে যখন আগুন জ্বলছিল, তখন টানা ১৫ মিনিট ধরে আগুনে দগ্ধ হতে থাকা ওই কিশোরীর চিত্কার শুনতে পাই। সে পালাতে চেয়েছিল, কিন্তু কেউ তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নি।’
বিবিসির তদনে্ত বের হয়ে আসে, ওই কিশোরী ছিল মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। যখন তার ঘরে আগুন দেওয়া হয়, ওই সময় তার মা-বাবা কাজের সন্ধানে বাইরে গিয়েছিলেন। ইউনিট ক্যাপ্টেনের নির্দেশে থিহাই ওই কিশোরীর ঘরে আগুন দিয়েছিলেন।
সূত্র : বিবিসি