শিরোনাম
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১০:৫১ অপরাহ্ন

ভারতে এবার জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক

/ ১০০ পঠিত
প্রকাশের সময় : বুধবার, ৪ মে, ২০২২

মিডিয়া ডেস্ক: ভারতে এর আগেও ধর্মীয় স্থান নিয়ে দড়ি টানাটানি অনেক হয়েছে। ইদানীং যেভাবে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ছবি ফুটে উঠছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। এরই মধ্যে ফের দানা বেঁধেছে উত্তর প্রদেশের জ্ঞানবাপি মসজিদ নিয়ে নতুন বিতর্ক।

মন্দির না মসজিদ- এ বিতর্ক অনেক দিনের। অযোধ্যার বাবরি মসজিদ থেকে শুরু করে বারাণসীর এই জ্ঞানবাপী মন্দির। হিন্দুদের মন্দিরের জায়গা নিয়ে মসজিদ গড়ে তোলার অভিযোগ তোলা হচ্ছে বারংবার।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে রেষারেষির জের ইতোমধ্যেই পৌঁছেছে আদালত পর্যন্ত। ওই মসজিদ আসলে মন্দিরের জায়গায় তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ‘ভগবান বিশ্বেশ্বরের বন্ধু’ নামে এক মামলাকারী।

উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, কারো মাধ্যমে আদালতে মামলা করতে পারেন খোদ ভগবান। অযোধ্যা রামমন্দির বিবাদের সময়েও ‘বন্ধু’র মাধ্যমে মামলা করতে দেখা গিয়েছিল রামলালাকে। এ ক্ষেত্রেও সেভাবেই মামলা দায়য়ের হয়েছে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে।

ভারতের ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে কাশীর এই বিশ্বেশ্বর মন্দিরের একটি অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছিল মসজিদ। মন্দিরটিও তৈরি হয়েছিল তার আমলেই। এতদিন ধরে পাশাপাশি প্রতিবেশীর মতোই ছিল এই দুই ধর্মস্থান।

বছর চারেক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে কাশীতে বিশ্বনাথ করিডোর গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হওয়ার কাজও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।

সেই মসজিদের জমি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মামলাকারী। যদিও কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সাথে এই জ্ঞানবাপী মসজিদটির তেমন কোনো বিরোধ নেই।

বাণারসি আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটিই এই মসজিদটির পরিচালনার দায়িত্বে। ইতোমধ্যেই কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের জন্য জমিও দান করেছে তারা। মন্দির ট্রাস্ট এই মামলায় কোনোভাবে যুক্তও নয়। তবে স্বঘোষিত বিশ্বেশ্বর পক্ষই এই মামলা টেনে নিয়ে গেছে আদালত পর্যন্ত।

ঈদের পরেই সেই মসজিদের ভিতরে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ৬ এবং ৭ মে আর্কিওলজি সার্ভেকে দিয়ে ভিডিওগ্রাফি ও সমীক্ষা করানো হবে বলেও জানানো হয়েছে আদালতের পক্ষ থেকে। বারাণসীর সিভিল বিচারক রবিকুমার দিবাকর ওই নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সার্ভে করা হবে শ্রীঙ্গার গৌরী মন্দিরেও।

আর তাতেই আপত্তি রয়েছে আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভিডিওগ্রাফির জন্য কাউকে মসজিদের ভিতরে ঢুকতে দেয়া হবে না। তারা আদালতের নির্দেশের কড়া বিরোধিতা করছেন বলেই জানিয়ে দিয়েছেন মসজিদ কমিটির যুগ্ম সচিব এস এম ইয়াসিন।

আর এই ব্যাপারটি নিয়েই ফের বিতর্ক ঘনিয়েছে। মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা করেছে বিশ্বহিন্দু পরিষদ। তাদের জাতীয় মুখপাত্র বিনোদ বনসাল জানান, মসজিদ কমিটি কী লোকানোর চেষ্টা করছে? মসজিদ চত্বরে প্রবেশাধিকার নিয়ে আদালত অবমাননারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন বিনোদ। এদিকে, আদালতের নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বহু মুসলিম নেতারাই।

এমনিতেই গোটা দেশ জুড়ে বারবার উসকে উঠেছে সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার ছবি। ঈদের আগে সহিংসতা ছড়িয়েছে মধ্য প্রদেশের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়েই। কয়েকদিন আগেই দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী ও ভোপালের বেশ কিছু অংশে সহিংসতা ছড়ায়। ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়েও বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতি জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কের জল যে অনেক দূর গড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়াকিবহাল মহল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ