ফরিদাবাদের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান কিভাবে তিলে তিলে চূড়ান্ত ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায় দেখুন!
এক.
ফরিদাবাদের আনাস মাদানী খ্যাত সাহেবযাদা “যুবায়ের” এর ভি আই পি নিবাস নির্মাণ করা হয় মাসিক নেয়ামত অফিস বরাবর উপরের ৪র্থ তলায়, এ যেন বিশাল বালাখানা!
কী নেই তাতে?
ফ্রীজ, সোফা, বক্স খাট, কম্পিউটার ডেস্ক, টেবিল, আলীশান বস চেয়ার এবং ওয়াশরুমে গিজার সহ অত্যাধুনিক সব ফিটিংস সমৃদ্ধ এক বালাখানা!
একবিন্দুও বাড়িয়ে বলিনি।
এতো গেল বড় সাহেবযাদার হুজরাচিত্র! আর ছোট সাহেবযাদার বালাখানায় ঢুকলে ভুলে যাবেন আপনি ফরিদাবাদের কোন শিক্ষকের রুমে আছেন নাকি গুলশানের কোন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে আছেন!
এতো মুহতামিম পুত্রদ্বয়ের পার্সোনাল অফিসের বিবরণ, যারা উভয়ে শিক্ষক কিন্তু পারিবারিক নায়েবে মুহতামিম তাদের ফুফা নূরুল আমীন পুত্রদ্বয়ের (উভয়েই ছাত্র) রুমের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি, পূর্বের একপোষ্টে বিবরণ দিয়েছি।
এসব নিয়ে কানাঘুষা হলে উত্তর আসে নিজের পয়সায় আরো কিছু করলে কার কী আসে যায়?
বাস্তবে নির্মাণ খরচ সহ অধিকাংশই প্রতিষ্ঠানের ব্যায়ে..
মাদরাসার ছাত্ররা যেখানে এক দেড় হাত করে সিট পেতে কষ্ট হয়ে যায় সেখানে এতো বিশাল বালাখানা বানিয়ে শুধু সাহেবযাদাদের বিশ্রামাগার তৈরী করা, তার উপর গিজার সহ যে সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার হয় তার বিল কে দেয়?
অথচ অন্যান্য উস্তাযগনের রুমের চিত্র ঠিক তার উল্টো।
যে বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় মুহতামিম পুত্রদ্বয়ের বালাখানা সে বিল্ডিংয়ে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক লিফট। যদিও বাহ্যিক কারন হিসাবে দেখানো হয়েছে মুরুব্বী উস্তাযগনের ক্লাসে উঠানামার কষ্ট লাঘব করণে এই লিফট সংযোজন।
গত বছর নূরুল আমীন হার্ট এ্যাটাক করায় এটা খুব জরুরী হয়ে পড়ে তাই তার ব্যাবস্থাপনায়ই তার ভক্তের পয়সায় নাকি লিফট সংযোজন করা হয়।
দুই.
মজলিসে ইলমীর সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, দারুল ইকামার কোন শিক্ষক বাহিরে ইমামতি করতে পারবেনা। স্বনামধন্য সাবেক শিক্ষক মাওলানা নাঈম ও আশ্রাফ আলী সাহেবদ্বয় বহুবার চেষ্ট করে মাদরাসার আশ- পাশেও ইমামতি নেওয়ার অনুমতি পাননি! অথচ সাহেবযাদা যুবায়ের সেই গোলাপবাগে বাবার মসজিদে ইমাম নিযুক্ত হন হাটহাজারী হুজুরের হুকুমে ( অর্থাৎ নামের উপর কাঠাল ভেঙ্গে) এমনকি নিজে ঠিক মতো মাদরাসায় দরসে নিয়মিত হাজির হতে না পারার অজুহাতও হল যে, আব্বুর কাজ করতে করতে……। কিংবা অসুস্থ দাদা -দাদীর সেবা করতে করতে দেরী…।
(যখন তারা জীবিত ছিলেন)
এমনকি মাদরাসার আভ্যন্তরীন কোন কাজে তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনা। সব মুহতামিম সাহেবের কাজে ব্যাস্ত অজুহাতে।
অন্যান্য শিক্ষকদের কড়ায় গন্ডায় উপস্থিতির হিসাব দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সাহেবযাদাদ্বয় সব কানুনের উর্ধ্বে, তাদের নেই কোন দায়বদ্ধতা।
কোন রকম তাড়াহুড়ো করে এসে সবকে টানা পড়িয়ে চলে যায়, তার সবকে ছাত্ররা বড় অসহায় বিশেষত বড়জনের পড়ানো মুখতারুল মা’আনী, হেদায়া আউওয়াল, শরহে আকায়েদ এসব সবকে ছাত্ররা চরমভাবে মজলুম, না পারে কিছু বলতে না পারে সইতে। ছাত্রদের ভাষ্যানুযায়ী সবকে নাকি তাকে প্রায় সময় হ্যাং ভাইরাস ধরে! এ পরিভাষার বিবরণ ছাত্ররা বলে সে ক্লাসে পড়াতে গিয়ে প্রায় সময় আটকে যায় তারপর কিছুক্ষণ হ্যাং থেকে হাশিয়া বাইনাস্ সতর দেখে সমাধান করতে পারলে বলে আর না হয় চতুরতার আশ্রয় নিয়ে এটা ওটা বলে পার করে দেয়!
অনেক সময় নিজেই ঢোল পিটায় মাদরাসার অনেক কাজে ব্যাস্ত থাকতে হয় তো তাই……।
মুহতামিমের নির্দেশেই এমন যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষকতার দ্বিতীয় বছর থেকে তাকে ইফতায় ক্লাস ও তামরীন দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিন.
অধিকাংশ ছাত্র – উস্তায তাদের ছাত্র জীবন থেকেই তাদের হাতে যিম্মী। চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনা না বললেই নয়।
ঘটনা : ১
সাবেক দারুল ইকামা মুফতী মুহসিনুল করীম সাহেব হাফি. (বর্তমান জামিয়া ইউনুসিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতী) একবার সাহেবযাদা যুবায়ের এর ছাত্রযমানায় তার মোবাইল জব্দ করেন, তারপর যুবায়ের মুহতামিমের কাছে গিয়ে অভিযোগ করলে মুহতামিম তাৎক্ষণিক মুহসিন সাহেব হুজুরকে ডেকে রুঢ আচরণ করে তাঁর থেকে মোবাইলটা নিয়ে হুজুরের সামনেই যুবায়েরকে দিয়ে দেয়!
ঘটনা :২
বর্তমান শিক্ষক ছোট সাহেবযাদা ওবায়েদ তার ছাত্র যমানায় পরীক্ষার হলে এন্ড্রয়েড সেট নিয়ে যেত এবং মাঝে মধ্যে সেটি বের করে দেখতো, তার এক সহপাঠী এটা দেখে সে সময় হল নেগরান মুফতী আব্দুস্ সালাম সাহেব হাফি.কে জানালে তিনি তাকে একপাশে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন তুমি মোবাইলে কি দেখো? ওবায়দ উত্তর দেয় ঘড়ি দেখি! অথচ মসজিদে কত বড় বড় ঘড়ি রয়েছে তা কারো অজানা নয়।
মুফতী আব্দুস সালাম সাহেবের মতো উসূলী মানুষ হওয়া সত্ত্বেও মুহতামিমের জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে বলে মোবাইল জমা নেয়া কিংবা সার্চ করেননি, কারণ মুহতামিম সাহেবের মেযাজ অজানা নয়। অযথাই কেন বিড়ম্বনায় পড়তে যাবেন!!
এমনিতেই মুফতী অাব্দুস সালাম সাহেবকে ইফতার যিম্মাদারীর অজুহাতে মিশকাতের দরস কেটে দিয়ে শুধু সপ্তাহে দু’দিন শামায়েলে তিরমিযীর দরস ছাড়া দরসিয়্যাত থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। দাওরায় শামায়েলের উপরে আর তারাক্কীও হয়না!
এসব বিষয়ে বিশেষত মেশকাত কিতাব কেটে দেওয়ার পর তিনি মণক্ষুন্ন হয়ে একদিন বলেছিলেন যে, “যিম্মাদারীর নামে তারাক্কী অাটকে দেয়া কিংবা তানাযযুলী এটা জুলম”
হুজুরের এ কথাটি আমি হুজুরের মুখ থেকে নিজ কানে শুনেছি। শুধু “জুলম” শব্দটি নিয়ে আমার সন্দেহ তবে এ শব্দে না হলেও কাছাকাছি ই ছিল।
অথচ যারা হুজুরের কাছে পড়েছেন তাদের জানা থাকার কথা হুজুরের ফাহমে ওসী’ কত মজবুত, হুজুরের কাছে যারা হেদায়া কিংবা মিশকাত পড়েছেন তাদের থেকে অভিব্যাক্তি নেওয়া যেতে পারে।
হাটহাজারীতে মুফতী কেফায়াতুল্লাহ সাহেব হুজুর ইফতায় যেমন দরস দেন তেমনি শু’বায়ে দরসিয়্যাতেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।
মুফতী আব্দুস সালাম সাহেব হুজুর এসব নিয়ে মাঝে মধ্যেই আক্ষেপ করে বলে ফেলেন “দরসিয়্যাতের সাথে আমার মুনাসাবাত শেষ হয়ে যাচ্ছে”
যাক প্রসঙ্গক্রমে চলে আসলো হুজুরের কথা বলে ফেললাম।
ঘটনা : ৩
সাহেবযাদা ওবায়েদের মেশকাতের বছর তাহরীকে দেওবন্দ পরীক্ষায় নাম্বার কম পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রহমান সাহেবকে কঠোর জবাবদিহিতা করতে হয়েছে, এমনকি তিনি খাতা যথাযথভাবে দেখেননা বলেও অভিযোগ করা হয়েছে, বারবার রিভিউর পর তিনি স্পষ্টত জানিয়ে দেন তাকে নাম্বার বাড়িয়ে দেয়ার আর কোন সুযোগ নেই। যদি করতেই হয় তাহলে অন্যদের উপর জুলুম করতে হবে। এতে মুহতামিম সাহেব বেজায় নাখোশ হন, একারণে তাকে পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে মুহতামিম সাহেবের রোষাণলে পড়েত হয়। এমনকি পরের বছর সে জামাত থেকে তার ঘন্টা কেটে তো দেওয়া হয়েছেই সর্বোপরি অন্যান্য জামাতের ঘন্টাগুলোকেও ব্যাপক রদবদল করে আরো অবনতি করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য এ নম্বারকান্ড ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার আগের ঘটনা।
ঘটনা: ৪
একদিন ফরিদাবাদের দফতরে তা’লীমাতে বসে স্পষ্টবাদী আরেকজন সিনিয়র মুহাদ্দিস (সঙ্গত কারণে নাম প্রকাশ করলাম না) কয়েকজন উস্তাযের সামনেই বলেলেন যে, মুহতামিমের পোলাদের নাম্বার দিতে ভয় লাগে, যদি নাম্বার মনমত না হয় তাহলে না জানি আবার ডেকে নিয়ে বকাঝকা করেন!
ওবায়েদ এর নাম্বারটা বাড়িয়ে দিতে হবে।
তখন তিনি আক্ষেপের সাথেই ইনসাফের বিষয়ে অনেক কথা বলেন।
শেষ দুই ঘটনার মত প্রেক্ষাপট কেন তৈরী হলো?
পরীক্ষার ফলাফল ফাইনালাইজড হওয়ার পর প্রথম দফা মুহতামিম সাহেব নিজে দেখতেন তারপর অন্যদের নযরে সানী, তারপর ফাইনাল প্রিন্ট করে মুহতামিমের অনুমোদন। এসব কাজ তিনি সুস্থ থাকতে নিজে বারবার তা’লীমাতে এসে খবর নিতেন, অসু্স্থ হওয়ার পর তা’লীমাতের আভ্যন্তরীণ কার্যসম্পাদনকারী শিক্ষক মাওলানা ফয়জুল্লাহ সাহেবের উপর ফরজ ছিল মুহতামিম সাহেবকে রুমে গিয়ে নিয়মিত ফলাফল আপডেট দিয়ে আসা।
তারপর তিনি দেখে দু’টি কাজের হুকুম করতেন :
এক. সাহেবযাদাদের কোন ফলাফলে অসঙ্গতি দেখলে সেটা বাড়িয়ে ঠিক করে দিতে। [বিষয়টা প্রায় সময় এমন হত যে, মুহতামিম সাহেবের রোষাণলে পড়ার আগেই ঘষামাজা হয়ে তারপর তার সামনে পেশ করা হতো]
দুই. জালালাইন, মেশকাত ও দাওরায় যদি ফেলের হার বেশী হয় তাদেরকে পাশ করিয়ে কমিয়ে দিতে।
এখন অবশ্য আগের মতো এতো গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেননা, না মানে সময় পাননা। কারণ সাহেবযাদারা ই এখন দেখছেন।
আজ এ খানেই শেষ করি, লেখা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে।
মাআ’সসালাম: 𝑼𝒔𝒂𝒎𝒂 𝑴𝒖𝒉𝒂𝒎𝒎𝒂𝒅