শিরোনাম
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১১:২৩ অপরাহ্ন

মহাসচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পরিবারের কিছু চাঞ্চল্যকর ফলাফলের ইতিবৃত্ত!

/ ৬৬৭ পঠিত
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০

দারুল ইসলাম

বেফাক মহাচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সন্তানদের পড়াশুনা ও বেফাক পরীক্ষার আগে – পরের হালত পর্যালোচনা পড়ুন, জানুন।

এক.
সাহেবযাদা যুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস (মেঝো ছেলে) বর্তমান ফরিদাবাদের সিনিয়র শিক্ষক।

ছাত্রাবস্থায় নীচের জামাতে উল্লেখযোগ্য ভালো ছাত্র ছিলোনা, শরহে বেকায়া জামাত থেকে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন শুরু হয়, এ বিস্ময়কর ফলাফল দেখে সহপাঠীদের চোখ কপালে উঠে যায়, তার ঘনিষ্ট এক সহপাঠি বন্ধু বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে, একপরীক্ষা পার হলো বুঝে আসেনি, পরের পরীক্ষায় আরো সখ্যতা তৈরী করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখে যে, যুবায়ের যা যা পড়ত সেও তাই পড়ত তখন থেকে সে ও মাদরাসার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে শুরু করে।

অাভ্যান্তরীন ঘটনা অনেক লম্বা, যাক পরীক্ষার আগে নির্দিষ্ট কিছু অংশে পড়াশোনা করে সিরিয়ালে টক্কর দেয়া শুরু হয়। কিছু শিক্ষক মুহতামিমের নেক নজর পাওয়ার আশায় একপ্রকার বাধ্য ছিল।

যুবায়ের অত্যন্ত চতুর ও কৌশলী, কাকে কখন কিভাবে বাগে আনতে হয় তার অলিগলি সব বিষয়ে এক্সপার্ট সে।
বেফাকে শরহে বেকায়ায় ১১ নম্বর সিরিয়ালে এসেছে। তখনও নম্বর বাড়িয়ে ঠেলে সামনে এগিয়ে দেওয়া তার দাদা মাওলানা আব্দুল গনী সাহেব বেফাকের নিরীক্ষক ও প্রশ্নপ্রণয়ন কমিটির প্রভাবশালী সদস্য!

গড়ালো মেশকাত, দাওরা পর্যন্ত। দাওরার বেফাক পরীক্ষায় তাকে ঠেলা দিয়ে এক নম্বরে দু’জনকে ফরিদাবাদ থেকে উন্নীত করার ঘটনা একদম ঘনিষ্টদের থেকে তার সামনেই আলোচনা হতো, বরং এটাকে অপরাধ নয় উল্টো গৌরব মনে করা হতো। মাদরাসার সুনামের স্বার্থে এটা করা হয়েছে!

এতই ভালো ছাত্র মাদরাসায় এখন দরসিয়্যাতে কতটুকু যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে তা তার ছাত্রদের মুখেই শুনুন। পিছনের একপোষ্টে বিবরণ দিয়েছি।

দুই.
সাহেবাযাদা ওবায়েদ বিন আব্দুল কুদ্দুস (ছোট ছেলে) গতবছর কোন রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ পাওয়া ফরিদাবাদের শিক্ষক।

তার নীচের জামাতের পড়াশুনাও মেঝ ভাইয়ের মতই সে ভাইয়ের মত তেমন চতুর না হওয়ায় উপরের দিকেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। যা করেছে শুধু বাবার জোরে!

পূর্বের এক পোষ্টে বলেছি যে, রমজানে ফলাফল প্রকাশ হলো তখন মুহতামিম সাহেব মাত্র কিছুদিন আগে নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি ই’তিকাফে বসা ফরিদাবাদ মাদরাসা মসজিদে, ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে।

সর্বপ্রথম পুরো ফলাফল কপি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবূ ইউসুফ নিয়ে আসলো তার কাছে, মহাসচিব সাহেব দেখে ছেলের রোল নাম্বারটা দিয়ে বললেন এটা ঠিক করে দিয়েন। আনুষ্ঠানিক ফলাফলে গড় ছিল ৭৮% হস্তক্ষেপের পর সেটা বরাবর ৮০% করে শান্তনার মুমতায দেয়া হলো! সাথে এমন আরো অনেক ছাত্রের করা হলো যাতে এটা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, খুব তড়িঘড়ি করে বেফাক আবার মার্কশীট ছাপিয়ে পাঠায়।

ফলাফল রিভিউ আবেদন সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা জানেন প্রক্রিয়াটা কত দীর্ঘ ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার!

পরের বছর সে ইফতা পড়ে ফরিদাবাদেই, তখন হাইঅা গঠন হলে তাতে গতবৎসরের সবভালো ছাত্রকে আবার মুহতামিমের হুকুমে পরীক্ষা দেওয়ানো হলো। সাহেবযাদার ক্লাসমেট ১ নম্বর ছাত্রকে খুব পীড়াপীড়ি করা হলো পরীক্ষা দিতে, কিন্তু সে শেষ পর্যন্ত অটল ছিল পুণঃপরীক্ষা না দেয়ার উপর। যদ্দরুণ তার চেয়ে নিচের ফলাফলকারীরা চাটুকারীতা করে শিক্ষক হতে পারলেও সব উস্তাদদের কাছে মুআদ্দাব ও আমলী ১ নাম্বার ছাত্র “সালিম” ফরিদাবাদে নিয়োগের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

যাক প্রাসঙ্গিক কথা চলে আসলো, সাহেবযাদা ওবায়েদ পরীক্ষার আগ পর্যন্ত কোন ধরণের প্রস্ততি ও আগ্রহ প্রকাশ নেই উল্টো তার সতীর্থদের বলাবলি করছে যে গতবার সারাবছর পড়েও গড়ে ৮০ পাইছি এবার তো কিতাবের সাথে সম্পর্কই নেই ৪০ পাবো! পরীক্ষা দিবোনা। এই মনোভাব তার।
পরীক্ষার আর মাত্র বাকি ২ দিন, আকস্মিক তার বাবা তাকে ডাকালেন, বললেন: তুই পরীক্ষার প্রস্ততি নেস না কেন?
সে জানালো হটাৎ করে আমি আর কি পরীক্ষা দিমু?

তখন তাঁকে সুয়ালাত ও রেজাল্টের ব্যাপারে আশ্বম্ত করে সাহস যোগানো হলো। পরীক্ষা দিয়ে বাগিয়ে আনলো ঈর্ষণীয় সিরিয়াল!
ফলাফলের পর তার বক্তব্য, ইশ! আর কয়েকটা দিন সময় পেলে আমিও ১ নাম্বার হয়ে যেতাম!!

তিন.
একমাত্র সাহেবযাদী মোসাম্মাৎ মুসাররাত! নাহবেমীরের বছর বেফাক পরীক্ষায় বহু মেহনত করে কোন রকম জায়্যিদ জিদ্দান পর্যন্ত উন্নীত হয়।

নাহবেমীরের পর আর মাদরাসায় পড়েনি, বাসায় ভাই যুবায়েরের কাছে পড়েছে মাঝে গ্যাপ বহু বছর। বাবা মহাসচিব হওয়ার পর আকস্মিক মেশকাতে ভর্তি হয়েছে যাত্রাবাড়ী বুরহান সাহেবের মাদরাসায়। সেখানে ৫/৬ জন ছাত্রীর মাঝে সে হয় মাদরাসা পরীক্ষায় ৪র্থ।

কিন্তু বছর শেষে সবাইকে অবাক করে মহাসচিবযাদী উঠে আসলো বেফাকে ৬ নাম্বার সিরিয়ালে! যেখানে তার সারা বছরের ভালো ছাত্রী সাথীরা উন্নীত হয়েছে জায়্যিদ জিদ্দানে, কেউ মুমতাযও হয়নি। সেখানে পিছনের সারির মহাসচিবযাদী পিছনের রাস্তায় ৬ নাম্বার সিরিয়ালে!

ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পর সেই মাদরাসায় শুরু হয় আলোচনা – পর্যালোচনা, সে মাদরাসার ইতিহাসে এতো ভালো ফলাফল! যদি ধরেই নেয়া হয় যে, সে বছর ভালো পড়াশুনা হয়েছে তাহলে প্রশ্ন তারচে’ ভালো ছাত্রী ২/৩ জন, তাদের রেজাল্ট এতো খারাপ কেন? একপর্যায়ে এসব সমালোচনা বেফাক অফিস পর্যন্ত পৌঁছে, টনক নড়ে মহাসচিব পরিবারে।

পরের বছর আর সেখানে ভর্তি করালোনা। ভর্তি করালো ঢালকানগরের জাফর সাহেব (বেফাক সহসভাপতি) -র মাদরাসায়।

সেখানে সে দাওরায় মাদরাসায় পরীক্ষা না দিয়েও একনাম্বার ছাত্রী ছিল!

জাফর সাহেব তার বিবির মাধ্যমে তার বাসায় খবর পাঠিয়েছিলেন স্পষ্ট এই ভাষায়: “মুসাররাত” কে বলো যেহেতু কিছুদিন আগে মাত্র বিয়ে হলো তার পরীক্ষা দেয়া লাগবেনা, আপার সাথে এসে দেখা করতে বলো, এক নাম্বার তো সে হবেই, চিন্তা করতে নিষেধ করো।”
এভাবেই সারা বছর একনাম্বার সাজিয়ে রাখা হলো।

তারপর হাইঅার পরীক্ষায় কাকতালীয়ভাবে মহাসচিবযাদী মেধা তালিকায় সারা দেশে তৃতীয় স্থানে!
ঢালকানগর মহিলা মাদরাসায় বোধহয় এতো ভালো রেজাল্ট এই প্রথম। ঢালকানগরের সুনামের উপর দিয়ে চলে যায়, এটা আর ততটা সমলোচিত হয়নি।

এই পরীক্ষার সময় মহাসচিবযাদী ৮ মাসের গর্ভবতী প্রচন্ড অসুস্থ, ডাক্তার তাকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে বলেছেন এবং পড়াশোনা একদম নিষেধ করেছেন।
এমন অসুস্থতায় পরীক্ষা না দেওয়ার জন্য ঘনিষ্ঠরা পরামর্শ দিলেও মহাসচিব পুত্রদ্বয় খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রচার করলো, নাহ্ সে পরীক্ষা দিলে সারা দেশে ১ নাম্বার হবে। পরীক্ষা না দেয়াটা মোটেই উচিত হবেনা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ