সাঈদ আবরার
কিরে সাঈদ !
আইজগা তো তোর মিতাই আইবো ।
বয়ান হুনতে যাইবি নি ক্যান ?
-কি জানি কাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করছিলেন আমার উস্তাদে মুহতারাম হাফেজ সোলাইমান সাহেব হুজুর।
-মিতা কেডা হুজুর ? আমার সরল প্রশ্ন।
আরে চিনোস না, মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী। দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস। অনেক বড় আলেম।
ওনি আজকে আসবেন আমাদের এখানে ।
আমি ছোট তখন । নাজেরা পড়ি । ফরিদাবাদ জামিয়ায় । ছোট আলেম- বড় আলেমের তমিজই কতটুক বুঝি! তবুও আমার নামে নাম একজন বড় আলেমের তাঁকে তো অবশ্যই দেখতে হয়-এই আগ্রহ থেকেই মূলত বয়ান শুনতে যাওয়া।
ঘন্টা বাজছে। পুরো জামিয়া যেন ছুটছে মসজিদ পানে। কে কার আগে সামনে বসতে পারে এর প্রতিযোগিতা। আমাদের ছোটদের “জেলখানার” গেটটাও খুলে দেয়া হলো। কি এক আনন্দে যেন আমরাও ছুটলাম। কোনরকম মসজিদের নিচতলায় পেছনে একটু জায়গা করে নিলাম। তিনি আসবেন।
এখনই আসবেন। অধীর আগ্রহে সবাই। সবার দৃষ্টি মিম্বরের দিকে। তিনি এলেন। দুধে ধোয়া কাঠ বাদামের মত মিষ্টি তাঁর চেহারা। সুঠাম দেহ। যাকে বলে ‘বাস্ততান ফিল্ জীস্’ম’। কথা বলতে শুরু করলেন। ভরাট গলা। উর্দুর অসাধারণ উচ্চারণে। কিন্তু আমরা তো ছোট। তালিবে ইলমের পথে একেবারে কলি। উর্দু তো তখন ‘দূর কি বাত’ বাংলায় তো পুরো বুঝিনা। তবুও মুগ্ধতা। অপার ভালোলাগা! কিযে মিষ্টি লাগছিলো কথাগুলো! বড় ভাইয়েরা কখনো হাসছে তো আমরাও হাসছি। কিছু বুঝি আর না বুঝি।
বয়ান শেষ হলো। তিনি চলে যাবেন। জহির ভাইয়ার হাত ধরে ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম মুসাফাহা করতে। কিন্তু হলো না। বড় ‘উসুলী’ মানুষ তিনি। কারো সাথে মুসাফা করলেন না মজলিসের শৃংখলার স্বার্থে।
কাছে দাঁড়িয়ে নিরবে দেখে গেলাম তাঁর চলে যাওয়া। কি আলিশান রাজকীয় ভঙ্গিতে হাঁটেন তিনি। দ্রিম দ্রিম মাটিতে লাঠি ফেলছেন আর পথ চলছেন। যেন কোথাকার কোন রাজা হেঁটে যাচ্ছে। চলে গেলেন। জয় করে গেলেন আমার কোমল হৃদয় রাজ্য। সত্যিই তিনি হয়ে গেলেন আমার হৃদয় রাজ্যের রাজা। একটা স্বপ্ন আঁকলাম বুকে। চুপিচুপি পুষে গেলাম সেটা। কাউকে বলিনি কোনদিন।
কিন্তু সে স্বপ্ন আর সত্যি হলো না! তিনি চলে গেলেন।…. না আমি মানতে পারছি না তিনি চলে গেছেন! না ফেরার দেশে! যেখান থেকে কেউ ফেরে না! আল্লাহর কাছে! সংবাদ শুনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলাম। একদম থমকে গেলাম। কিছু বলার ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেললাম।…..আর কিছু লিখতে পারছি না। জান্নাতে ভালো থাকুন প্রিয়! বাররাদাল্লাহু মাদফানাহু! ওয়া নাওয়ারাল্লাহু মারক্বদাহু! আপনার চেতনা আমার মন-মানসে মিশে গেছে।
আপনাকে নিয়ে গল্প বলার এগুলোই আমার পুঁজি।
শিক্ষার্থী ,জামিয়া ফরিদাবাদ