মিডিয়া ডেস্ক : বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিআইডিএস’র এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সরকার এরইমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাটমন্ত্রী এর আগে পাটকলগুলো বন্ধের কথা বললেও এবার কৌশলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক বলে এগোচ্ছে বলে পাটকল শ্রমিক নেতারা মনে করছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারাবেন। পাটকল শ্রমিক আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে সরকারের এই সিদ্ধান্ত অমানবিক।
সরকার স্থায়ী ২৫ হাজার শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানোর কথা বললেও বাস্তবে একই কারণে অস্থায়ী ও বদলি শ্রমিকদেরও চাকরি থাকবে না।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের হিসেবে করোনার মধ্যে এখন পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার জানান, এখনো শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। প্রতিদিনই শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন। আগে যাদের চাকরির বয়স এক বছরের কম তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। এখন যাদের চাকরির বয়স বেশি, বেতন বেশি তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে।
বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা ছাঁটাই না করে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন কমিয়ে দেওয়া নিয়ে কথা বলছেন। তারা বলেছেন, এখন মোট বেতনের ৬৫ ভাগ দেওয়া হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধার কারণে তা এখনো কার্যকর হয়নি।
বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি আছে, বেতন নেই। যারা এমপিওভুক্ত তারা মোট বেতনের সরকারের দেয়া ৬৫ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। সরকারি চাকরি যারা করেন তাদের বেতন নিয়ে এখনো কোনো সংকট তৈরি হয়নি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ এখনো কর্মচারিদের বেতন দিলেও কত দিন তা দিতে পারবে অনিশ্চিত।
বিআইডিএস-এর জরিপ
অনলাইনে ৫ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯০৯ জনের ওপর একটি জরিপ চালায় বিআইডিএস। জরিপে অংশ নেয়া ১৩ শতাংশ মানুষ, যারা ফরমাল সেক্টরে কাজ করতেন, তারা চাকরি হারিয়েছেন বলে জানান। যাদের আয় ১১ হাজার টাকার কম তাদের ৫৬.৮৯ শতাংশ পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, ৩২.১২ শতাংশের আয় কমে গেছে। যাদের আয় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তাদের ২৩.২ শতাংশের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ৪৭.২৬ শতাংশের আয় কমে গেছে।
আর যাদের আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি তাদের ৩৯.৪ শতাংশের কমেছে এবং ৬.৪৬ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এই সময়ে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। কমপক্ষে মাধ্যমিক পাস এমন নাগরিকদের ওপর এই জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষ ও নারীর অনুপাত ৬৭:৩৩।
চাকরি আছে বেতন নেই
১৩ ভাগ মানুষ যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা প্রতিমাসে নিয়মিত বেতন পেতেন। তারা দিনমজুর বা অনানুষ্ঠানিক কোনো কাজের সাথে জড়িত নন। আর আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি আছে কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না এরকম কর্মজীবীর সংখ্যা অনেক। ২৫ ভাগের বেতন ৫০ থেকে ৩৫ ভাগ কমানো হয়েছে।
ব্র্যাকের এক চলতি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, চাকরি আছে বেতন নেই এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তারা শহরে টিকতে না পেরে গ্রামে চলে যাচ্ছেন।
বিআইডিএস’র জরিপ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তারা ৮০ ভাগ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। এখন সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে সেটা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আর প্রণোদনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত চাকরি টিকিয়ে রাখা এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা। সেটার আমরা ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের যা সম্পদ আছে তা দিয়েই কাজ করতে হবে। দরকার সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা।
যারা ফরমাল সেক্টরে চাকরি করেন তাদের বড় একটি অংশ এখন বিপাকে আছেন। তাদের আয় কমে গেছে অথবা একটি অংশের আয় নেই। দরিদ্রদের জন্য সরকার কিছুটা হলেও খাদ্য বা অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।
সূত্র: ডয়চে ভ্যালে