আনীস বিন সাইফ
এক
ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম । মাথার ওপর গনগনে সূর্য তাপ ছড়াচ্ছে ইচ্ছেমতো । সেই তাপ উপেক্ষা করে মানুষ ছুটছে নিজ নিজ কর্মস্থলে। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত । কারো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই কারও ।তবুও কিছু মানুষ হাসিমুখে কথা বলছে একে অন্যের সাথে। হয়তো কাজের ফাঁকে । বা কাজ ফাঁকি দিয়ে।
খালিশপুর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে ডিউটি পালন করছে দুই পুলিশ কর্মকর্তা । এলাকাটি স্বর্ণপট্টি নামে পরিচিত। মহাসড়কের দুপাশ জুড়ে অসংখ্য জুয়েলারি শপ। কখন কী হয় বলা তো যায় না ।
তাই এখানে পুলিশের আনাগোনা একটু বেশি! আপন মনে কথা বলে যাচ্ছে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ।পাশ দিয়ে কেউ গেলে কখনও ঘুরে তাকাচ্ছে ।ঘামে ইউনিফর্ম এর পেছনের পাশটা চপচপ। কখনো দখিনা বাতাস হালকা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে গায়ে ।মাঝে মাঝে সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে দূরপাল্লার কিছু গাড়ি । দমকা বাতাস এসে ঝাপটা দিচ্ছে ।
এগারোটা বেজে গেছে বারটায় ডিউটি শেষ ।ততক্ষণ তো থাকতেই হবে। কষ্ট হলেও! এটাই তো পুলিশী জীবন। ডান পাশে বসা লোকটির ডান বাহুর ওয়াকিটকিটি অনবরত চিৎকার করে চলেছে। সেই চিৎকারের প্রতি কারও কোন মনোযোগ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তারা বরং নিজেদের মাঝে কথা বলতেই ব্যস্ত। রিক্সার টুংটাং শব্দ কেমন বিরক্তি সৃষ্টি করছে। বেল বাজতেই রিক্সার দিকে চোখ বড় করে তাকাচ্ছে দুজনেই ।মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো উভয়ের ।বাঁ পাশে বসা লোকটির ফোন এসেছে । ‘এক মিনিট ‘ বলে ফোন রিসিভ করল সে । কেমন উত্তেজিত মনে হলো তাকে । কীভাবে , কখন , কত, এইসব প্রশ্ন করে চলেছে একের পর এক ।বেশ বিষণ্ন মনে হচ্ছে যেন। হঠাৎ বড় কোনো বিপদ এলে যেমন হয় তেমন ।
দুই
খুলনা জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম । পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে এক সময়ের খরস্রোতা আর বর্তমানের মৃতপ্রায় ‘নবগঙ্গা’ । অনতিদূরেই বাজার । এই বাজারেই চালের আড়ত আবুল কাশেমের ।ভালোই যাচ্ছে দিনকাল। ব্যবসায় উন্নতি হচ্ছে দিনদিন । টিনের ঘর পাকা হচ্ছে । তিন সন্তান, মা- বাবাকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল । কেউ কি ভাবতে পেরেছিল ? এমন এক পরিবারে বিষাদের কালো ছায়া পড়বে!
রাত ন’টা। আবুল কাশেম বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষণ হলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মাত্র বারান্দায় বসেছে ।এমন সময় ফোন এলো কোন এক অপরিচিত নম্বর থেকে। ফোন নিয়ে উঠোনে চলে গেল আবুল কাশেম। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল অপরিচিত কণ্ঠস্বর । বলতে লাগল, “আগামীকাল সকাল দশটার মধ্যে যদি এই একাউন্টে তিন লাখ টাকা জমা করেন , তাহলে তিনদিন পর আপনি পাবেন আট লাখ টাকা!” বিস্ময়ে থ হয়ে সে! কী করবে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা । একটু পর শান্ত হয়ে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল। কাউকে কিছুই বলল না । বুঝতেও দিল না কাউকে ভেতরের অস্থিরতা। রাতটা কোনমতে কাটিয়ে সকালে সময় মত বের হলো দোকানের উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সে দোকানে না গিয়ে গেল ব্যাংকে। যোগাযোগ করল সেই ফোনদাতার সাথে। নির্দিষ্ট একাউন্টে তিন লাখ টাকা জমা দিলো। কাউকে বলল না পর্যন্ত। মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটিয়ে বাজারের পথ ধরল। স্বাভাবিকই ছিল সবকিছু । দেখতে দেখতে তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেল ।কোন ফোন এলো না । চতুর্থদিন ওপাশ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে ফোন দিল । ওপাশ থেকে যে কথাটা ভেসে এলো সেটা শুনে তার মুখের হাসিভাবটা মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল। কপাল ঘামতে শুরু করলো । মনে হতে লাগলো পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল। “আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না… “!
একবার , দুইবার , পাঁচবার ফোন দিল সে! প্রতিবারই একই কথা এখন কী করবে সে?? কষ্টে অর্জিত টাকা এত সহজে হাতছাড়া হয়ে যাবে ? মনে পড়ল বন্ধু রফিকের কথা । পুলিশে আছে। তাকেই ফোন করার কথা ভাবল। পরক্ষণেই আবার মনে হল আরেকটা দিন দেখি । পরদিনও একই অবস্থা ! ফোন বন্ধ। এখন সময় এগারটা চল্লিশ । ফোন দিলো বন্ধু রফিককে । সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করলেন পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। বোঝাই যাচ্ছে আবুল কাশেমের অবস্থা এখন কী! বন্ধু ! কিছু একটা কর । অনেক কষ্টের টাকা!
তুই এত বড় একটা বোকামি কীভাবে করলি? তুইতো ব্যবসায়ী মানুষ ! আবুল কাশেম কান্না ধরে রাখতে পারল না ।ওদিকে রফিক তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তুই ভাবিস না আমি যা পারি করবো। তুই তোর টাকা পাবি। চিন্তা করিস না ।আর এখন কান্না থামা! এত সহজে ভেঙে পড়া তোর জন্য শোভা পায় না । নামাজের পর তোর সাথে কথা বলব, এখন রাখি। এই বলে ফোন রেখে দিলেন রফিক ।
দুই পুলিশ কর্মকর্তার একজন হলেন রফিক অপরজন ইকবাল । ইকবাল হোসেন রফিকের চেয়ে বয়সে বড়ো । ইকবাল বসে বসে সব লক্ষ্য করছিল। ফোনে কী কথা হলো জানতে চাওয়ার আগেই ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা শুরু করল রফিক ।এদিকে ডিউটির সময় শেষ । ইকবাল হোসেন বললেন, চলো যাওয়া যাক । আর লোভের ফল কি কখনো ভালো হয়??!
শিরোনামটা আরো বড় দিয়েন লেখক ভাই
চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ ।
তবে সব জায়গায় বড় শিরোনাম দেওয়া কষ্টকর ।
ধন্যবাদ, আপনার কথা খেয়াল রাখবো ইনশাল্লাহ
ধন্যবাদ
আরও কোন ভুল-ত্রুটি হলে সেগুলোও ধরিয়ে দেওয়ার আবেদন রইল
হুম।