শিরোনাম
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১১:১৪ অপরাহ্ন

নকল দুধ খাচ্ছেন না তো? আজই সাবধান হউন!

/ ৬০৫ পঠিত
প্রকাশের সময় : রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০

হুমায়ুন কবীর

বর্তমান সময়ে নকল আর ভেজাল পণ্যে চতুর্দিক ছেয়ে গেছে। সাধারণ খাবার গুলো থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবারেরই এখন ডুব্লিকেশন বেরিয়ে পড়েছে। দুধটি একটি প্রাকৃতিক খাবার। বান্দার জন্য সৃষ্টার দেওয়া এক বিশেষ নেয়ামত। কিন্তু আফসোস! আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। সাময়িক লাভের আশায় মানুষের ক্ষতি করে চলছি। এই নকল দুধের ব্যাপারটি প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না, পরে গুগলে সার্চ করলাম, বিস্তারিত জানলাম। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই নকল দুধ চীনের বাণিজ্যিক কোন কারখানায় নয়, স্বয়ং বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে নোংরা ও অস্বস্তিকর পরিবেশে।


পাবনা,সিরাজগঞ্জ,বগুড়া,সাতক্ষীরাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চলছে নকল দুধ তৈরির কারসাজি।

মারাত্মক সব কেমিক্যাল আর ক্ষতিকারক রসায়নিক দ্রব্য দিয়ে নকল দুধ তৈরি করা হয়। একমণ ফুটন্ত পানিতে এক কেজি দুধের ননী,আধাকেজী মিল্ক পাউডার,কয়েক ফোঁটা কাটার অয়েল,২৫০ গ্রাম হাইড্রোজ সমপরিমাণ লবণ,১০০ গ্রাম সৈয়াবিন তেল ও এক ফোঁটা ফরমালিন মিশিয়ে এই দুধ তৈরি করা হয়। খাঁটি দুধের মত ফেনা তৈরি করতে এই নকল দুধে মেশানো হয় ডিটারজেন্ট পাউডার বা শ্যাম্পু।ঘনত্ব বাড়াতে মেশানো হয় অ্যারারুট। স্বাদ ও গন্ধের জন্য মেশানো হয় কাস্টিক সোডা,ফরমালিন সালফিউরিক
অ্যাসিড এমনকি ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইডের মত ক্ষতিকারক রসায়নিক।

বিষাক্ত এই দুধ থেকে তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি।এসব দুধের ছানা থেকে বানানো হচ্ছে রসনা বিলাস বাহারী সব মিষ্টান্ন।আর এই ভেজাল দুধ কৌশলে দেশের নামী-দামী ব্রান্ডের কোম্পানীর সাহায্যে প্যাকেটজাত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।

এভাবে এক মণ দুধ তৈরিতে খরচ হচ্ছে মাত্র দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। আর তা বিক্রি হচ্ছে ষোলশ টাকায়, যা তার উৎপাদন খরচ থেকে সাতগুণ বেশি। এই নকল দুধে থাকে সোডিয়াম বাইকর্বনেট,যা কিডনির অসুখের অন্যতম কারণ।বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দুধ দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এই দুধ নিয়মিত পান করলে কিডনি নষ্ট হওয়া,ব্রেনে রক্তক্ষরণ হওয়ার প্রবল আশংকা থাকে। তাই সুস্হ থাকতে হলে দুধ পানে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। আপনি যেন দুধ পান করছেন,তা কতটুকু পিওর, আপনার নিশ্চিত হতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন খাঁটি দুধ ও নকল দুধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারা।

তাই এখানে আসল দুধ ও নকল দুধের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের কয়েকটি উপায় দেওয়া হল,যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সহজেই জানতে পারবেন কোনটি আসল দুধ আর কোনটি নকল দুধ।

দুধে পানি মিশানো হয়েছে কিনা কীভাবে বুঝবেন

**ঢালু কোন মসৃণ পৃষ্ঠার উপর কয়েক ফোঁটা দুধ ফেলুন।খাঁটি দুধ হলে তা আস্তে আস্তে গড়িয়ে যাবে এবং দুধের সাদা দাগ দেখা যাবে। ভেজাল দুধ হলে দ্রুত গড়িয়ে যাবে এবং সাদা দাগ দেখা যাবে না।

দুধে ডিটারজেন্ট পাউডার বা শ্যাম্পু মিশানো হয়েছে কিনা যেভাবে জানবেন

**একটি গ্লাসে ৫ থেকে ১০ মিলিলিটার দুধ এবং সমপরিমাণ পানি নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকান। যদি ডিটারজেন্ট পাউডার বা শ্যাম্পু মিশানো হয়,তাহলে তাতে ঘন ফেনা দেখা যাবে।খাঁটি দুধ হলে খুব পাতলা ফেনা সৃষ্টি হবে।

দুধে স্টার্চ ( মাওয়া,পনির) মিশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়

**একটি পাত্রে ২-৩ মিলিলিটার দুধের সঙ্গে ৫ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে ফুটান। এরপর ঠান্ডা করে ২-৩ ফোঁটা আয়োডিন টিনকিউর দিন।যদি দুধের রঙ নীলচে হয়,তাহলে বুঝবেন তা ভেজাল দুধ। আয়োডিন টিনকিউর ঔষুধের দোকান থেকে সহজেই কিনে নিতে পারবেন।

  • দুধে ফরমালিন মিশানো হয়েছে কিনা যেভাবে বুঝবেন*

**একটি টেস্টটিউবে ১০ মিলিলিটার দুধ নিন এবং এতে পাঁচ মিলিলিটার সালফিউরিক অ্যাসিড যুক্ত করুন।যদি বেগুন বা নীল রঙের প্রদর্শিত হয়,তাহলে বুঝতে হবে দুধে ফরমালিন মিশানো হয়েছে। দুধ দীর্ঘদিন নষ্ট না হওয়ার জন্য এতে ফরমালিন মিশানো
হয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন মিশ্রিত দুধ স্বাস্হ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

দুধে ডালডা মিশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়

**একটি টেস্টটিউবে ৩ মিলিলিটার দুধ নিন।এবার এতে ১০ ফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং ১ চা চামচ চিনি যুক্ত করুন। ৫ মিনিট পর যদি দেখেন, মিশ্রণটি লাল রঙের হয়েছে। তাহলে বুঝবেন দুধে ডালডা মেশানো হয়েছে।

কৃত্রিম দুধ ; যেভাবে চিনবেন

**উচ্চ মাত্রার ভেজাল দিয়ে খাঁটি দুধের আদলে তৈরি করা হয় কৃত্রিম দুধ। যা সিন্হেটিক দুধ হিসাবে পরিচিত। সিন্হেটিক দুধের স্বাদ তেতো হয়। সহজেই এই ভেজাল দুধ চিনার উপায় হচ্ছে, হাতের আঙ্গুলে নিয়ে ঘষলে সাবানের মত অনুভূত হবে। এ ছাড়া দুধ গরম করার পরে হলদেটে রঙ ধারণ করবে।

(ইন্ডিয়া টাইমস)

পুনশ্চঃ শুধু মাত্র নকল দুধই নয়,বাজারে এখন অধিকাংশ  পণ্যের ডুপ্লিকেট বা নকল পাওয়া যাচ্ছে। লবণ,দুধ ডিম,কলা, বাঁধাকপি, তরমুজ থেকে শুরু করে চানাচুর, বিস্কুট, দই, আইসক্রীম- কী নেই! সবকিছুতেই ভেজালের ছড়াছড়ি।রাজধানীসহ দেশের
নানা জাগায় নকল পণ্য তৈরির অসংখ্য কারখানা রয়েছে। নকল ও ভেজাল পণ্য প্রতিরোধে প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা নেই। দু’এক জাগায় অভিযান-ভূমিকা থাকলেও অধিকাংশ স্থানে প্রশাসনের চোখের সামনে দেদারসে চলছে এসব নকল পণ্য তৈরির কারসাজি।

তাই আমরা খাদ্য অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নিকট বিশেষভাবে আবেদন করছি,তারা যেন নকল
ও দূষিত খাবার প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন এবং ভেজাল ও নকল পণ্য তৈরির কারখানাগুলো
সিলগালা করে জরিমানা ধার্য করেন। সাথে সাথে এ জাতীয় খাবার আমদানী ও প্রস্তুতকারীদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্হা নেওয়া হোক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ