🔵 এনায়েতুল্লাহ : অনলাইন রিপোর্টার
সরকারের ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনাকে ‘পজিটিভ’ হিসেবে দেখছেন না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এই প্রণোদনা প্যাকেজকে ‘ঋণের প্যাকেজ’ আখ্যায়িত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এতে সাধারণ মানুষদের জন্য কিছুই নেই।
দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবেলায় গত রোববার প্রধানমন্ত্রী ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। রোববার নতুন চারটি প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন ঋণ সুবিধা, এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম চালুর ঘোষণা দেন।
গত রোববার বিকালে নিজের উত্তরার বাসায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রেন্সপন্স করেছেন, এটা পজিটিভ তখনই বলতে পারতাম যদি আমরা দেখতাম যে আসল সমস্যার সমাধান করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের, খেটে খাওয়া মানুষের, ইনফরমাল সেক্টারের কৃষকদের, তাদের কোনো কথা এখানে (প্রণোদনা প্যাকেজ) নেই”।
“এখানে আমার কাছে যেটা মনে হয়ে যে, ৭২ হাজার কোটি টাকা.. পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলতে কিছু নেই। সব ঋণের প্যাকেজ।”
এর আগের দিন বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন।
তিনি রোববার বলেন, “দিন আনে দিন খায়, এমন গরিব মানুষের জন্য আমরা সরকারকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলাম। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম এটা অনুদান দিতে হবে। আমরা বলেছি, ভাতা বাড়াতে, চিকিৎসক-নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা দিতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।
“শুধুমাত্র ঋণ নয়। আপনাকে এভাবে তাদেরকে অনুদান, ভাতা, বেতন বাড়িয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেইভাবে কথা বলেননি। ‘দিন আনে দিন খায়’-এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আনফুরচুনেটলি সেই সেক্টরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে কোথাও, তার প্যাকেজের মধ্যে কোথাও সেই ধরনের কিছু আমরা দেখতে পাই নাই। রেমিটেন্স যারা পাঠান, তাদের কোনো কথা এই প্রণোদনা প্যাকেজে নেই।”
স্বাস্থ্য খাতে বেশি অর্থায়ন প্রয়োজন ছিল মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “হেলথ সেক্টরটা একেবারেই নেগলেকটেড, কোনো কথাই বলা হয়নি এখানে। ভেন্টিলেটর কত আছে আপনারা জানেন। আরও বেশি সেটা তৈরি করার কোনো কথা এখানে (প্রণোদনা প্যাকেজে) নেই।
“সব চেয়ে বড় দুর্বলতা দেখুন। হেলথ ডিপার্টমেন্টের মধ্যে পারস্পরিক যে সমন্বয় থাকা দরকার, সেটাও ঠিক নেই। ডিজি হেলথ এক কথা বলছেন, আইইডিসিআরের ডিজি আরেক কথা বলছেন, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো আরও ভীষণ কথা বলছেন। যেসব কথা শুনলে মনে হবে, দেশে কোনো ভাইরাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সারা পৃথিবী ভয়ংকর মহামারীর মধ্যে পড়েছে, সারা পৃথিবী গ্রেট ডিপরেশনের দিকে যাচ্ছে। সেই বিষয়গুলো সরকারের যদি দায়িত্ববোধ না থাকে, তাহলে এই রাষ্ট্র কিভাবে টিকে থাকবে এটা আমাদের বোধগম্য নয়।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা সবাই হাত বাড়িয়ে আছি, আমরা সবাই উদ্যোগী আছি। তারপরেও তারা বলছেন যে আমরা না কি দায়িত্বজ্ঞানহীন-কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছি। কোথায় দেখালেন তারা এসব?
“আমরা তো ২৭টা দফা দিয়েছি। তার বর্ণনা দিয়েছি। প্রত্যেকটা বিষয় যুক্তসঙ্গতভাবে বলেছি। আজকে সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই করোনাভাইরাসকে মোকাবেলার জন্যে। যেই মানসিকতার দরকার ছিল, সেটাকে তৈরি করবার জন্য তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।”