মুহাম্মদ আদিল নাছরুল্লাহ
মানুষ শান্তি প্রিয় ৷ প্রতিটি মানুষের প্রতিটি স্বপ্ন ও আশায় থাকে সুখ ও শান্তির আবাস ও নিবাস৷ মানুষ চায় সুখ-শান্তি ও আনন্দ-আহ্লাদে সমৃদ্ধ করতে তার জীবনপাতা৷ শিক্ষা-দিক্ষা ও ভদ্রতা-মনুষত্ব দ্বারা মিল রাখতে চায় জীবনের ছন্দ ৷ আর জীবনকে সুন্দর-সুচারুরূপে গড়ে তুলতে শ্রম দিয়ে যায় অবিরাম-অবিরত৷
কিন্তু কিছু মানুষের লোলুপ ও লোভার্থ দৃষ্টিতে হারিয়ে যায় অন্যের জীবনের স্বাচ্ছ্যন্দ-সুশৃঙ্খল সুচারু অবকাঠামো৷
কখনো সম্পদ হাতিয়ে নেয়৷ কখনো মিথ্যার ঘৃণ্য জালে আটকে লুফে নেয় ঘর-বাড়ি ও জমি৷ তাই তো বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত শুনা যায় সমাজের নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের কাহিনী৷ শুনা যায় জমি-বাড়ি দখলের মতো হীন খবর এবং চুরি,ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতি ও সুদ,ঘুষের খবরও বিরল নয়৷
শুধু কী তাই? কোট কাচারিতেও ন্যায়বিচার পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে৷ যার টাকা আছে বিত্ত আছে সেই বেঁচে যায়, আর যার টাকা নেই-হতদরিদ্র তার নিবাস হয়।জেল-হাজতে ৷ এমনি আরো ঘৃণ্য,নিচু ও তুচ্ছ খবর প্রকাশ পায় মানুষের মুখে মুখে ও পত্রিকার পাতায় ৷ ফলে মানুষের সুন্দর জীবন গঠনের নির্মল-সচ্ছ আশা, স্বপ্ন ক্ষত-বিক্ষত ৷ শান্তির স্থানে অশান্তির বিরাজ৷ মিথ্যার কালো চাদরে সত্য আজ আবৃত৷ নীলচে আকাশে অসত্যের কালো ধোঁয়া৷ আর মানবতা হারিয়ে মানুষের স্বপ্ন ভেঙ্গে একাকার ৷ মানুষ আজ দুঃখে ভারাক্রান্ত ৷ দুঃখের ভেলায় ভেসে নিরবে-নির্জনে কেঁদে যায়—বেদনায় চোখের অশ্রু ঝরায় ৷
তবে কোনো ওপায় কী নেই যাতে ফিরে আসবে মানুষের সুখ-শান্তি? কোনো পদ্ধতি কী নেই
সুন্দর জীবনের রঙিন স্বপ্ন গড়ে তুলার? হতদরিদ্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার কোনো পন্থা কী নেই?
অবশ্যই, সুখ-শান্তি, দরিদ্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার ও কালো ধোঁয়া দূর করার উত্তম পন্থা রয়েছে, যা মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলে দিয়েছেন মানুষের সুখ-শান্তির জন্য ৷ আর এর মধ্যে রয়েছে ইহকাল ও পরকালের আনন্দ ৷
শুনুন! মহামহিম রবের নির্দেশবাণী: হে মু’মিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীরূপে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা
মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হোক অথবা বিত্তহীন- আল্লাহ্ উভয়ের ঘনিষ্টতর ৷ তাই তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো
না ৷ যদি তোমরা পেছালো কথা বলো অথবা পাশ কাটিয়ে যাও তবে তোমরা যা কর আল্লাহ্ তার সম্যক খবর রাখেন৷”
(নিসা, আয়াত: ১৩৫)
এই আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে,।ন্যায়বিচারে মানুষের প্রতিষ্ঠিত হতে হবে ৷ আর এই ন্যায়-ইনসাফে কোনো ধরনের সখ্যতার অবকাশ নেই৷ এমন কি মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও বিত্তবান অথবা বিত্তহীনের কোনো প্রশ্রয় নেই৷ আর এই ন্যায়।ইনসাফের সাথে যখন বিচার করা হবে তখন তখন বন্ধ হবে খুন, চুরি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতি,ধোঁকাবাজি ও অপরাধমূলক সমস্ত কর্মকাণ্ড৷
অশান্তির দুষিত ধোঁয়া থেকে মুক্তি পাবে দেশ ও জাতি। তখন আর পত্রিকার পাতায় দেখা যাবে না কোনো অপরাধের চিহ্ন৷ চারদিকে থাকবে শুধু শান্তি আর শান্তি ৷ ইতিহাসের পাতায় আজও সে উপমা অম্লান ৷
হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. প্রখ্যাত তাবেঈ৷ উমাইয়্যা খলিফা৷ খলিফা সুলাইমানের পর ৯৯ হিজরীতে তিনি খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷ তিনি ছিলেন ন্যায়-ইনসাফে সাহাবায়ে কেরামের প্রতিচ্ছবি ৷ তাঁর খেলাফত সময়ে একই চারণভূমিতে বাস করতো বাঘ ও বকরি ৷খুঁজে পাওয়া যেতো না হতদরিদ্র কোনো লোক ৷ জেল-হাজতের
শাস্তি ভোগ করতে হতো না কোনো নিরপরাধীকে। তখন রাজ্যে ছিলো সুখ-শান্তির বিরাজ ৷ ছিলো না অশান্তির খাঁ খাঁ শূন্যতার কোনো আবাস৷ মানুষের ঠোঁটে ছিলো তৃপ্তি ও প্রাপ্তির উজ্জ্বল হাসি৷ ছিলো সুখ-শান্তির সচ্ছ আবেশ যা তাঁর ন্যায়-ইনসাফেরই প্রতিফল৷
সুতরাং আলোচনা-পর্যালোচনা ও বুদ্ধি-বিবেচনার ভিত্তিতে বলা যায় আজ সমাজের কুলষতা ও পাপ-পঙ্কিলতা দুরিভূত করতে হলে ন্যায়-ইনসাফের পুনঃপ্রতিষ্ঠা অপরিহার্য৷ আর ন্যায়-ইনসাফের উপকারিতাও বিপুল যা অনস্বীকার্য৷
আমাদের সমাজে ন্যায়-ইনসাফের বিচার ব্যবস্থা যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, সাক্ষীদাতাও যখন ন্যায়ের সাক্ষ্য দিবে তখনই সমস্ত অপরাধের নির্মূল হবে৷ বন্ধ হবে দুর্নীতি৷
রুদ্ধ হবে মানুষের বুকফাটা চিৎকার ও অসহায়ের আর্তনাদ ৷
বইবে সুখ-শান্তির সুমিষ্ট হাওয়া৷ দূর হবে নীলচে আকাশে বিরাজমান কালো ধোঁয়া৷ চারদিক বিরাজ করবে নির্মল সুখ-শান্তি৷ পথ খুঁজে পাবে মানুষের আশা ও স্বপ্ন৷ আর মানুষ সরোবরে অবগাহন করবে সুখ-দরিয়ায়৷ আসুন, ন্যায়-ইনসাফ পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতীজ্ঞা করি হাতে হাত রেখে৷
অবশেষে কবির ভাষায় বলি:
বিরাজ মিথ্যা চুরি ডাকাতি দুর্নীতি
কর্ম সব যব তুচ্ছ-হীন,
আন নতুন ভোর ভাই ধোঁয়া কর দূর
বাজাও ঐ ন্যায়ের বীণ ৷